উইভিং-১

মাড় প্রকরণ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - উইভিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

স্পিনিং ও ওয়াইন্ডিং বিভাগ হতে প্রাপ্ত সুতা হতে তৈরি ওয়াপাস বিম দ্বারা সরাসরি উইভিং করা যায় না। সুতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঁশ বাইরের দিকে বের হয়ে থাকে। এছাড়াও ঝাঁপ ও চক্ষু দ্বারা শেড গঠনের জন্য টানা সুতা বারবার ঘষা খায়। ফলে এর হেয়ারিনেস বৃদ্ধি পায় ও সুতার শক্তি কমে যায়। অনেক সময় সুতার পাক কম থাকে, সুতা দুর্বল থাকে যার কারণে তাঁতের বিভিন্ন মোশন, ঝাঁপের ওঠানামা মাকু -এর ঘর্ষণ সহ্য করতে পারে না। ইত্যাদি কারণে উইভিং করার সময় টানা সুতা ছিঁড়ে যায়, উৎপাদন ব্যাহত হয়। উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, কাপড়ও ত্রুটিপূর্ণ হয় । উপরোক্ত অসুবিধাসমূহ দূর করার জন্য ওয়াপাস বিমের টানা সুতায় মাড় দেওয়া হয়। মাড় প্রকরণে প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো টানা সুতার ন্যূনতম কোনো ক্ষতি সাধন না করে কাপড় বয়ন অর্থাৎ উইভিং করা। মাড় প্রকরণ সুতা ও কাপড়ের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে কাপড়ের দৃঢ়তা ও ওজন বৃদ্ধি করে। সর্বোপরি সুতার শক্তি ও মসৃণতা বৃদ্ধি করে টানা সুতা ছেঁড়ার হার কমিয়ে দেয়।

মাড় প্রকরণের সংজ্ঞা (Definition of sizing ) 
টানা সুতার শক্তি বৃদ্ধি ও ঘর্ষণজনিত কারণে সুতা ছেঁড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিমিং করা টানা সুতার পৃষ্ঠব্যাপী আঠালো পদার্থ দ্বারা মসৃণ করার প্রণালিকে মাড় প্রকরণ বা সাইজিং (Sizing) বলে ।

সাইজিং -এর উদ্দেশ্য 
১. টানা সুতার ঘর্ষণজনিত প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। 
২. টানা সুতাকে কোমল, মসৃণ ও উজ্জ্বল করা। 
৩. টানা সুতার বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকা ভাসমান আঁশগুলো সুতার পৃষ্ঠে লাগিয়ে দিয়ে সুতাকে মসৃণ করা ও শক্তি বৃদ্ধি করা। 
৪. দুর্বল ও কম শক্তিসম্পন্ন সুতাকে ব্যবহার উপযোগী করা। 
৫. সুতার উপর প্রতিরোধকারী পাতলা আবরণ দেওয়া। 
৬. সুতার শক্তি বৃদ্ধি করা। 
৭. সুতার ওজন বৃদ্ধি করা। 
৮. পলিয়েস্টার মিশ্রিত সুতায় যে স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তা হ্রাস করা।

মাড়ের উপাদানসমূহ 
মাড় বা সাইজ তৈরির জন্য বিভিন্ন উপাদানের প্রয়োজন। প্রতিটি উপাদানেরই আলাদা আলাদা গুণাগুণ রয়েছে। সুতার গুণগত মান ও প্রকারের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্রকার মাড়ের উপাদান প্রয়োগ করা হয়। নিম্নে মাড়ের উপাদানসমূহ উল্লেখ করা হলো। 
১. শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance) 
২. সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents ) 
৩. হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents) 
৪. অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics Agents ) 
৫. নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents )
৬. অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents ) 
৭. টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents ) 
৮. ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agents )

উপাদানসমূহের বিবরণ 
শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance)

একে মাড়/সাইজের মূল উপাদনও বলা হয়। এ উপাদানের জন্য মাড় আঠালো হয় । এ শ্বেতসারযুক্ত উপাদানের সাথে পানি মিশ্রিত করে তাপ প্রয়োগ করলে আঠালো পদার্থের পেস্ট (Paste) -এ পরিণত হয়। উদাহরণ- মেইজ স্টার্চ (Maise starch), তেঁতুলের বিচির পাউডার (Tamarind seed powder), টপিওকা স্টার্চ (Topioca starch), ময়দা (Flour ), সাগু স্টার্চ (Sagoo starch), আলুর প্যালো (Potato starch), রাইচ স্টার্চ (Rice starch) ইত্যাদি প্রাকৃতিক স্টার্চ । আবার সিএমসি (Carboxy Methyl Cellulose), পিভিএ (Polyvenyle Alcohol), পলিঅ্যাক্রাইলিক অ্যাসিড ইত্যাদি কৃত্রিম স্টার্চ বা অ্যাডহেসিভ।

সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents) 
সফেনিং এজেন্টকে কোমল রাখার উপাদানও বলা হয়। টানা সুতা কখনও কখনও শক্ত, অমসৃণ ও ভঙ্গুর হয়। এছাড়া সুতার খসখসে ভাব ও নমনীয়তা দূর করার জন্য সফেনিং এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ- মাটন ট্যালো (Mutton tallow), টেলটেক্স (Teltex), নারিকেল তেল (Coconut oil), ক্যাস্টর অয়েল, তিলের তেল, তালের তেল, তুলার বীজের তেল, জলপাই এর তেল, রেডির তেল, প্যারাফিন ওয়াক্স (Parafin wax), চায়না মোম (China wax), সুগার ক্যান ওয়াক্স (Sugarcane wax), ওয়াক্স (Wax), সফট সোপ (Soft soap) ইত্যাদি ।

হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents ) 
সুতাকে আর্দ্র রাখার জন্য হাইগ্রোসকোপিক এজেন্ট ব্যাবহার করা হয়। আর্দ্র রাখার উপাদানসমূহ বাতাস হতে জলীয় বাষ্প গ্রহন করে থাকে। এ এজেন্টস ব্যবহার করার ফলে টানা সুতা অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমান আর্দ্রতা শোষণ করে সুতাকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণ- ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2), ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2), গ্লিসারিন, জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), ডাই ইথিলিন গ্লাইকল, সরবিটল ইত্যাদি।

অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics ) 
একে বাংলায় প্রতিষেধক উপাদান বলা হয়। মিলডিউ অর্থাৎ ছত্রাক আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষেধক উপাদান ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সমস্ত স্টার্চই ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই কার্বন সুতা সাইজিং করার প্রয়োজনে স্টার্চ -এর পাশাপাশি অ্যান্টিসেপটিকস প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় । উদাহরণ- জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), কপার সালফেট (CuSO4), সেলিসাইটিক অ্যাসিড (CH (OH) COOH), সোডিয়াম সিলকো ক্লোরাইড, বিটা নেপথলস, কার্বোলিক অ্যাসিড ইত্যাদি। 

নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents ) 
মাড় দ্রবণ প্রস্তুত করার সময় দ্রবনের (PH) মাত্রা পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই দ্রবণকে নিউট্রাল করার জন্য নিউট্রালাইজিং এজেন্টস যোগ করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্রবণের (PH) মাত্রা ৬.৮ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত অল্প অল্প করে এ এজেন্টস ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ- সোডা অ্যাশ।

অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents) 
মাড় দ্রবণ অথবা মাড় পেস্ট প্রস্তুত করার সময় দ্রবণে ফেনা হবার সম্ভাবনা দেখা যায়। যার ফলে উক্ত দ্রবণ টানা সুতায় প্রয়োগ করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এ জন্য মাড় দ্রবণে অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস ব্যবহার করা হয়। যা মাড়, পেস্ট বা দ্রবণে ফেনার উৎপন্ন হতে বাধা প্রদান করে । উদাহরণ- অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH), কেরোসিন, টার্পেন্টাইন, পাইন অয়েল, অ্যামাইল, অ্যালকোহল, সিলিকন ডিফোমার ইত্যাদি ।

টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents ) 
টানা সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের প্রাকৃতিক রংকে নিউট্রালাইজড করার জন্য এ এজেন্ট ব্যবহৃত হয়। সাধারণত যে সমস্ত কাপড় যে অবস্থায় বিক্রি হবে উক্ত কাপড় প্রস্তুত করতে টানা সুতায় মাড় দেওয়ার সময় এ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। উদাহরণ- টিনাপল (Tinapol) আলট্রা মেরিন ব্লু, অ্যাসিড ডাই ও অপটিক্যাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট ইত্যাদি।

ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agents) 
সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের ওজন বৃদ্ধি করার জন্য যে পদার্থ ব্যবহার করা হয় সেগুলোই ওয়েটিং এজেন্ট। শুধু গ্রে অবস্থায় বিক্রি করার জন্যই এ ধরনের এজেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উদাহরণ- চায়না ক্লে (China clay), চক বা খড়িমাটি (CaCO3), ফ্রেঞ্চ চক (French Chalk), ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ( MgSO4), সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4), ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2 ) ইত্যাদি ।

উপরোক্ত মাড় দ্রবণ বা পেস্ট সাধারণত ১০০ ভাগ কটন সুতার জন্য প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

সাইজিং পদ্ধতির শ্রেণিবিভাগ

সাইজ-এর প্রয়োগ পদ্ধতি ও ড্রাই পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে সাইজিং মেশিনকে শ্রেণিবিভাগ করা হয়। সাইজিং পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে সাইজিং মেশিনসমূহকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 
১) সিলিন্ডার ড্রাইং (Cylinder drying) 
ক) দুই সিলিন্ডার বিশিষ্ট (Two cylinder type) 
খ) বহু সিলিন্ডার বিশিষ্ট (Multi cylinder type) 
২) হট এয়ার ড্রাইং (Hot air drying) 
৩) ইনফ্রারেড ড্রাইং (Infrared drying) 
৪) কম্বাইন্ড পদ্ধতি (Combind system)

প্রয়োগ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে মাড়করণ বা সাইজিং পদ্ধতিতে নিম্নলিখিত পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যথা- 
১. টেপ অথবা শ্লেশার সাইজিং (Tape or Slasher sizing ) 
২. হট মেল্ট সাইজিং (Hot melt sizing ) 
৩. হাই প্রেসার সাইজিং (High pressure sizing ) 
৪. ফোম সাইজিং (Foam sizing ) 
৫. সলভেন্ট সাইজিং (Solvent sizing ) 
৬. ইলেকট্রোস্ট্যাটিক সাইজিং (Electrostatic sizing ) 
৭. পলিমার ইমালশন সাইজিং (Polymer emulsion sizing ) 
৮. কম্বাইন্ড সাইজিং (Combind sizing )

মাড় প্রস্তুতপ্রণালি 
সাধারণ খোলা ট্যাংক 
কাঠ, সিমেন্ট ও মেটালের তৈরি আয়তাকার ট্যাংক যার ভেতরের দিকে কপার অথবা স্টেইনলেস স্টিলের প্রলেপ দেওয়া থাকে। এই আয়তকার ট্যাংকের ঠিক মাঝখানে একটি নাড়নি থাকে। এক্ষেত্রে সরাসরি স্টিম প্রবেশ করে মাড় মিক্সিং ও কুকিং করা হয়। 
ট্যাংক এর আকার 

ট্যাংক এর দৈর্ঘ্য = ৪ ফুট 
ট্যাংক এর প্রস্থ = ৩ ফুট 
ট্যাংক এর উচ্চতা = ৪ ফুট 
ট্যাংক এর আয়তন = 8x ৩ x ৪ ঘনফুট 
অর্থাৎ ১ ইঞ্চি পরিমাণ মাড়ের দ্রবণের পরিমাণ ১ ঘনফুট, সাধারণত একটি কাঠের কাঠি দ্বারা মাড়ের পরিমাণ মাপা যায়। এই মাপন কাঠিতে ১ ইঞ্চি পরপর দাগ কাটা থাকে যাতে সহজেই প্রতি দাগে ১ ঘনফুট মাড়ের পরিমাণ বোঝা যায়। এখন যদি ট্যাংকের পানির উচ্চতা ১৬ হয় তবে পানির আয়তন হবে ১৬ ঘনফুট। ব্যবহারের সুবধার্থে ট্যাংকের উপরোক্ত আকার করা হয়েছে। 
মনে করা যাক, এক ঘনফুট পানির ওজন ৬২.৫ পাউন্ড । ফলে ১৬ ঘনফুট পানির ওজন ১৬ x ৬২.৫= ১০০০ পাউন্ড বা ১০০ গ্যালন। ফুটানোর সময় স্টিমের কারণে পানির পরিমাণ সামান্য বেড়ে যায়। কাজেই মিক্সিং এর সময় সামান্য পরিমাণ পানি কম যোগ করতে হয়।

ইন্ডাস্ট্রিতে মাড় 
প্রস্তুতপ্রণালি সাধারণ খোলা ট্যাংক 
১. প্রথমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ট্যাংকে যোগ করি। 
২. পানি দেওয়ার পরপরই নাড়ানো শুরু করতে হবে এবং মাড় প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত চালু রাখতে হবে। এখন অ্যাডহেসিভ দ্রবাদি যোগ করি। 
৩. এবার প্রতিষেধক যোগ করি এবং ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত নাড়তে থাকি । 
৪. অতঃপর স্টিম যোগ করি এবং মিক্সারকে বয়েলিং তাপমাত্রায় নিয়ে যাই । 
৫. এরপর সফেনিং এজেন্ট যোগ করি। 
৬. স্টিম ক্রমাগত যোগ করতে থাকি যতক্ষণ পর্যন্ত না লিকারের ঘনত্ব উপযুক্ত হয়। 
৭. স্টিম চালনা বন্ধ রাখি। 
৮. এখন PH পেপার দ্বারা PH পরীক্ষা করি এবং সোডা অ্যাশ যোগ করতে থাকি যতক্ষণ PH ৬.৮ না হয়। 
৯. PH ৬.৮ এ আসলেই লিকার তৈরি হলো অর্থাৎ ব্যবহারের উপযোগী হলো। তাপমাত্রা ৬০° সে. এ ঠিক রাখি।

টেপ অথবা স্লেশার সাইজিং মেশিন 
এই সাইজিং মেশিনটিকে কনভেনশনাল সাইজিং মেশিনও বলা হয়। ওয়ার্পার মেশিন হতে ওয়ার্পারস বিম তৈরি করে স্লেশার সাইজিং মেশিনের ক্রিলে সেট করা হয়। মনে করা যাক ক্রিলের প্রতিটি বিমে ৫০০টি সুতা থাকে। কাজেই ২৫০০ অথবা ৩০০০ সুতার টানা বিম প্রস্তুত করার জন্য ৫টি অথবা ৬টি ওয়ার্পারস বিমের প্রয়োজন হয়। যা স্লেশার সাইজিং মেশিনের ক্রিলে স্থাপন করা হয়। চিত্র অনুযায়ী টানা সুতার শিট গাইড রোলার উপর দিয়ে মাড়ের বক্স এ আনা হয়। সাইজ বক্সে কপারের তৈরি একটি ছোট ইমালশন রোলার আছে যার নিচ দিয়ে টানা সুতার শিট টেনে আনা হয়। এরপর উক্ত সুতা এক জোড়া স্কুইজিং রোলার এর মধ্যদিয়ে সামনের দিকে চলতে থাকে। এর ফলে টানা সুতার গায়ে লেগে থাকা অতিরিক্ত মাড় সাইজ বক্সে পড়ে যায় । পূর্বে থেকে প্রস্তুতকৃত সাইজ পাইপের মাধ্যমে সাইজ বক্সে আনা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সাইজ বক্সে তাপমাত্রা সঠিক রাখার জন্য বক্সের মাড়ের মধ্যে স্টিম চালনা করা হয়। মাড় প্রয়োগের পর সুতার পৃষ্ঠের মাড় শুকানোর জন্য দুটি ড্রাইং সিলিন্ডারের পৃষ্ঠ দিয়ে টানা হয়। প্রথমে বড় ড্রাইং সিলিন্ডার ও পরে ছোট ড্রাইং সিলিন্ডার থাকে। অতঃপর সুতার শিট ফ্যান- এর উপর দিয়ে গাইড রোলারের মাধ্যম্যে লিজিং রড টানা সুতাগুলো আলাদা করে এক্সপেন্ডিং কম্ব এর সাহায্যে শুকানো টানা সুতার শিট একক সুতায় পরিণত হয়। অর্থাৎ প্রতিটি টানা সুতা একটি থেকে অপরটি আলাদা থাকে। এরপর টানা সুতা গাইড রোলার অতিক্রম করে মেজরিং রোলার এর উপর দিয়ে যায়। সবশেষে মাড়কৃত টানা সুতার শিট ড্রইং রোলার ও এর মধ্য দিয়ে উইভার্স বিমে জড়ানো হয়।

স্লেশার সাইজিং মেশিনের সাইজ বক্সের ইমালশন রোলার যত নিচে থাকবে মাড় পিক আপাতত বেশি হবে। মেশিন বন্ধ থাকাকালীন সময়ে ইমারশন রোলার সাইজ বক্স থেকে উপরে অবস্থান করে যাতে রোলারটিতে মাড় স্পর্শ না করে। ড্রাইং সিলিন্ডার দুটির মধ্যে পাইপের মাধ্যমে বয়লার থেকে স্টিম সরবরাহ করা হয় এবং তাপমাত্রা এমন রাখা হয় যাতে সাইজকৃত টানা সুতা ময়েশ্চার রিগেইন ৭% থেকে ৭.৫% এর মধ্যে থাকে। বড় ড্রাই সিলিন্ডারটি ৬ থেকে ৭ ফুট ব্যাসের ও ছোট ড্রাইং সিলিন্ডারটি ৪ ফুট ব্যাসের হয়ে থাকে। উইভার্স বিমের টানা জড়ানোর গতি প্রতি মিনিটে ২৫ থেকে ৩৬ গজ এবং টানা সুতাকে উপযুক্ত টেনশনে ফাইনাল বিম অর্থাৎ উইভার্স বিমে জড়ানো হয়। নতুবা পরবর্তী প্রক্রিয়ায় মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

একটা টানা বিমে প্রয়োজন অনুযায়ী দৈর্ঘ্যের টানা জড়ানো হয়, কিন্তু তাঁতে কাপড় রোলারে জড়ানোর সুবিধার্থে একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য পরপর কাপড় কেটে ইন্সপেকশন বিভাগে পাঠানো হয়। এ নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যেকে শনাক্ত করার জন্য স্লেশার সাইজিং মেশিনে উইভার্স বিম তৈরি করাকালীন রং দ্বারা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য পরপর একটি কিল মার্ক দেওয়া হয়।

সাইজিং-এর সময় গৃহীত সতর্কতাসমূহ 
সাইজিং-এর সময় নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

  • সাইজিং চলাকালীন সময়ে সাইজ দ্রবণের ঘনত্ব যেন কমে না যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সাইজিং করতে হবে তা যেন কম না হয় । 
  • মাড়ের দ্রবণের তাপমাত্র ৬০° সে. এ রাখতে হবে। সাইজ বক্সের সাইজিং রোলারের প্রেসার যাতে কম অথবা বেশি না হয় তার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। 
  • মাড় শুকানোর জন্য ড্রাইং সিলিন্ডারের যেন অতিরিক্ত তাপ না দেওয়া হয় যাতে কড়া সাইজিং না হয়। 
  • ভেজা অবস্থায় যেন উইভার্স বিম তৈরি না হয়। টানা সুতা একটার সঙ্গে অন্যটা না জড়িয়ে থাকে। 
  • সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। সাইজিং করা সুতা বিমে জড়ানোর পূর্বে ক্র্যাসিং না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। 
  • উইভার্স বিমে শুরু ও শেষ যাতে সুতার সংখ্যা একই থাকে তার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে।
Content added By

আরও দেখুন...

Promotion